পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ নয়; এক সাংস্কৃতিক যুদ্ধ

লিখেছেন লিখেছেন মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৪৯:৩৪ সকাল

এদিনে বর্ষবরণের নামে যা করা হয়, তার সকল আয়োজনের উৎপত্তি হলো মন্দির। আমি বাংলা ভাষাভাষী হওয়ায় যেমন বাঙালি, ইসলামের অনুসারী হিসেবে মুসলিমও। বাঙালিত্ব টেকানোর সাথে (বিজাতীয়) কৃষ্টি অনুকরণের কোন সম্পর্ক নেই, বরং মুসলমানিত্ব রক্ষার জন্য ভিন্নধর্মের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অনুকরণ না করাও অপরিহার্য। বাঙালি উৎসবের লেবাস পরিয়ে হিন্দুদের নানা পুজা-অর্চনাকে সার্বজনীন রূপ দেয়ার অপর নাম হলো পহেলা বৈশাখ উদযাপন বা বাংলা নববর্ষ বরণ।

ইসলামবৈরীদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার বদৌলতে ইতোমধ্যে হিন্দুদের বহুমাত্রিক পুজা এখন মুসলিম বাঙালীদের কাছেও নিছক বর্ষবরণ অনুষ্ঠান!! নিম্নে বাংলা বর্ষবরণের নামে পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতি বর্জনের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো:

প্রথমত: তথাকথিত বাঙালি চেতনার নামে প্রচারিত পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতির আগাগোড়া হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের নকল বা ফটোকপি। গণেশ পুজার 'মঙ্গল যাত্রা' থেকে নেওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা, 'চৈত্র সংক্রান্তি পুজা' থেকে নেওয়া চৈত্রসংক্রান্তি, হিন্দু-বৌদ্ধদের 'উল্কিপুজা' থেকে নেওয়া উল্কি উৎসব, বিভিন্ন হিংস্র-অহিংস্র জীব-জন্তু পুজা থেকে নেওয়া রাক্ষস-খোক্ষসের মুখোশ ও পশু-পাখীর প্রতীমা নিয়ে উৎসব, হিন্দুদের 'আশ্বিনে রান্না কার্তিকে খাওয়া' প্রথার আদলে চৈত্রের শেষদিনে রান্না করা অন্নে জল ঢেলে পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা খাওয়ার প্রথা এবং পুজোর অপরিহার্য আইটেম ঢোল-তবলা, কুলা ও হিন্দু রমনীর লাল সিঁদুরের অবিকল লালটিপ-পুজোর লেবাস শাদা শাড়ী ইত্যাদি হলো পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রধান উপাদান!! অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন ধর্মের মানুষের (ধর্মীয় আচারের) অনুকরণ বা স্বাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

দ্বিতীয় কারণ- উল্কি অঙ্কন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- উল্কি অঙ্কনকারিনী ও যার গায়ে অঙ্কন করা হয়- উভয়ের প্রতি আল্লাহর লা'নত বর্ষণ হয়। তাছাড়া এতে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয়, যা কুরআনের নির্দেশনা মতে হারাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতেও উল্কি অঙ্কন ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর ইচ্ছাকৃত স্বাস্থ্যহানী করাও ইসলামে নিষিদ্ধ।

তৃতীয় কারণ- নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা চর্চা। শালীন মেয়েরাও পহেলা বৈশাখের নামে অর্ধনগ্ন হয়ে বের হয়। গরমের দিনে তথাকথিত পহেলা বৈশাখের সাদা শাড়ি ঘামে ভিজে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অত্যন্ত নোংরাভাবে প্রকাশিত হয়। তাছাড়াও নারী পুরুষ ঢলাঢলির মাধ্যমে ব্যাভিচারের সবচে বড় ক্ষেত্র তৈরি হয় পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিতে। পান্তা-ইলিশের সাথে ইদানিং যোগ হয়েছে, যুবতী মেয়েদের হাতে খেয়ে মনের নোংরা চাহিদা মেটানো। উল্কি অঙ্কনের ক্ষেত্রেও বিপরীত লিঙ্গের হাত ব্যবহার করা হয় যা প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা।

চতুর্থ কারণ- পহেলা বৈশাখকে ঈদের মতো মর্যাদা দিয়ে জাতীয়ভাবে নতুন পোষাক ও আকর্ষণীয় খাবার গ্রহণের কালচার সৃষ্টি করা হয়। এমনকি এও বলা হয় যে, এটা নাকি বাঙালীর সবচে বড় জাতীয় উতসব। তাহলে ঈদ কতো নাম্বার সিরিয়ালে? অথচ মুসলমানের জাতীয় জীবনে দু'টি উৎসব দেওয়া হয়েছে। হিন্দুদের বারো মাসে ১৩ পুজার আদলে কোন মুসলমানের জন্য পহেলা বৈশাখকে আরেকটি বাৎসরিক উৎসবের দিন ধার্য করা জায়েজ নেই। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের অতি তোড়জোড় দেখে মনে হয়, তারা এটাকে এদেশের মানুষের প্রধাণ উৎসব হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং আজকাল প্রকাশ্যে ঘোষণাও করছে।

পঞ্চম কারণ- জীবন থেকে একটি বছর খসে পড়ার মহামুল্যবান ক্ষণে আত্মজিজ্ঞাসা না করে ফুর্তি করে প্রকারান্তরে পরকালকে ভুলে বসা। আল্লাহকে না ডেকে মুশরিকদের মতো হাস্যকরভাবে বৈশাখকে ডাকতে থাকা। যার ফলে প্রতিবছরই বৈশাখ আগমন করে কাল বৈশাখের ঝড় নিয়ে। বৈশাখকে আমরা না ডাকলেও সে আসবে। তবুও বৈশাখের রবকে না ডেকে অযথা বৈশাখকে ডাকার ফলে প্রতি বছরই বৈশাখ আসে কাল বৈশাখির ঝড় নিয়ে! আল্লাহ আমাদের সুবোধ দান করুন।


বিষয়: বিবিধ

১০৮৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

207457
১৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:২০
হতভাগা লিখেছেন : ১লা বৈশাখ পালন না করলে আপনি কিভাবে নিজেকে বাঙ্গালী বলে দাবী করবেন ?

বাঙ্গালী কিন্তু বীরের জাতি !
207476
১৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২৩
egypt12 লিখেছেন : আমাদের উচিত এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কৌশল অবলম্বন করা
207564
১৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ।
মানুষের মনের স্বাভাবিক চাহিদা বিনোদন। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা নাথাকলে এভাবেই অপসংস্কৃতি চেপে বসবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File